IQNA

শ্রীলঙ্কায় মুসলিমদের ওপর উগ্র বৌদ্ধদের হামলা

22:24 - November 18, 2017
সংবাদ: 2604347
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চলীয় গালে ডিস্ট্রিক্টে মুসলিমদের ওপর হামলা করেছে উগ্র বৌদ্ধরা। এর জের ধরে পুলিশ শনিবার এক অভিযান চালিয়ে অন্তত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। শুক্রবার রাতে সংঘর্ষ ও সহিংসতার সঙ্গে এরা জড়িত ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা ইকনা: পুলিশ জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া খবরের জের ধরে এই হামলা চালানো হয়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো গুজবে বলা হয়, মুসলিমরা লোকজনকে জোর করে ধর্মান্তরিত করছে এবং বৌদ্ধ প্রত্মতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোকে ভাংচুর চালাচ্ছে।

মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিমদের যাতে শ্রীলঙ্কায় আশ্রয় দেয়া না হয়, সেজন্যও কিছু কিছু বৌদ্ধ আন্দোলন করছে।

সংঘর্ষ ও সহিংসতা মারাত্মক আকার ধারণ করলে গালে ডিস্ট্রিক্টে শুক্রবার কারফিউ জারি করা হয়। শনিবার সকালে কারফিউ তুলে নেয়া হয়।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। শনিবারও গোটা এলাকার নিরাপত্তা জোরদার ছিল।

শুক্রবার রাতে গালেতে মুসলিম ও বৌদ্ধদের মধ্যে সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২ শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এবং ১ শ’ স্পেশাল টাস্ক ফোর্স সদস্য মোতায়েন করা হয়।

গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, একটি সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথমে ঝগড়া এবং পরবর্তীতে তা সহিংস সংঘর্ষে রূপ নেয়।

এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত এবং বেশ কয়েকটি বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে।

মন্ত্রীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বা অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। যারা ভিন্ন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও সাম্প্রদায়িকতা ছড়াচ্ছে বা উস্কানি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শ্রীলঙ্কায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর উগ্র বৌদ্ধদের হামলা

শ্রীলঙ্কায় জাতিসংঘের একটি সেফ হাউসে আশ্রয় নেয়া ৪০ রোহিঙ্গার ওপর হামলা চালিয়েছে দেশটির কট্টরপন্থী উগ্র বৌদ্ধরা। মঙ্গলবার দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোতে এ ঘটনা ঘটে। এরপর তাদের উদ্ধার করে কলম্বো থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরের একটি খ্রিস্টান অধ্যুষিত শহরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নেয়া বহুতল ওই ভবনে মঙ্গলবার হামলা চালায় গেরুয়া পোষাকধারী একদল কট্টরপন্থী বৌদ্ধ। এসময় তারা ভবনটির গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। তাদের মারমুখী অবস্থান দেখে আতঙ্কিত হয়ে ভবনের ওপরের দিকের একটি কক্ষে গাদাগাদি করে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গারা।

এসময় ঘটনাস্থল থেকে এক বৌদ্ধ চিৎকার করে বলে, ‘এই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা মায়ানমারে আমাদের বৌদ্ধদের হত্যা করেছে।’ নিজের ফেসবুক থেকে সরাসরি এ ঘটনার ভিডিও সম্প্রচার করেছে ওই ভবনে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণকারী এ কট্টরপন্থী বৌদ্ধ।

এ ব্যাপারে সেখানে দায়িত্ব পালনকারী এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা হামলাকারীদের সরিয়ে দিয়েছি এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

এক কর্মকর্তা জানান, গত মে মাসে শ্রীলঙ্কার উত্তর দিকের জলরাশিতে একটি নৌকায় ভাসমান অবস্থায় ৩১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়। তাদের পর্যায়ক্রমে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার কট্টরপন্থী বৌদ্ধরা যখন রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ করছিল তখন তাদের বহনকৃত প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘শ্রীলংকার বৌদ্ধরা মায়ানমারের বৌদ্ধদের সঙ্গে আছে।’

শ্রীলঙ্কায় আসা এসব রোহিঙ্গাকে জাতিসংষের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর দেখাশোনা করছে। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের আপাতত নিরাপত্তা ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ঠিক করবে শ্রীলঙ্কা সরকার।

গত ২৪ আগস্ট মায়ানমারের রাখাইনে সেনা চৌকিতে দুষ্কৃতকারীদের হামলার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের একটি সংগঠনকে দায়ী করে দেশটির সেনাবাহিনী ও সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ ও ঘরে আগুন দেয়া শুরু করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও কিছু রোহিঙ্গা অন্যান্য দেশেও পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে। আরটিএনএন
captcha