IQNA

নাগরিকত্বের মামলায় অর্থ পাচ্ছে আইএস বধু শামীমা

22:51 - April 16, 2019
সংবাদ: 2608352
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সিরিয়ায় গিয়ে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানো আইএস বধূ শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব ফিরে পেতে আইনি লড়াই চালাতে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পেতে যাচ্ছেন।

বার্তা সংস্থা ইকনা: ২০১৫ সালে নিজের ১৫ বছর বয়সে আরো দুই কিশোরীর সাথে লন্ডন ছেড়েছিলেন শামীমা। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ার উদ্বাস্তু শিবিরে শামীমাকে পাওয়া যাবার পর এক পর্যায়ে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করে দেয়া হয়।

শামীমার পরিবার আগে বলেছিল, সরকারের এই সিদ্ধান্তকে তারা আদালতে চ্যালেঞ্জ করবে।

ইংল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, আইনি লড়াই চালাবার জন্য শামীমাকে লিগাল-এইড বা অর্থ-সহায়তা দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি খুবই অস্বস্তিতে পড়েছেন।

তবে, হান্ট এটিও বলেছেন, ব্রিটেন এমন একটি দেশ যেখানে রাষ্ট্র কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিলে সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাতেও আর্থিক সঙ্গতিহীন নাগরিকেরা প্রয়োজনে রাষ্ট্রের সম্পত্তিতে অধিকার রাখে।

ইংল্যান্ডের লিগাল এইড হচ্ছে অর্থনৈতিক সহায়তা। যারা অর্থাভাবে আইনি লড়াই চালাতে অক্ষম, তারা যেনও আইনি সেবা পেতে পারে সেজন্য তাদেরকে জনগণের করের টাকা থেকে এই অর্থ-সহায়তা দেয়া হয়। অপরাধী বা ক্ষতিগ্রস্ত, উভয়েই এই সহায়তা চাইতে পারেন।

তবে, সম্প্রতি ইংল্যান্ডে ও ওয়েলসে এই সহায়তার ক্ষেত্রে সম্প্রতি ব্যাপকভাবে কর্তন করা হয়েছে।

আইনি লড়াই চালাবার জন্য কারা এই অর্থ-সহায়তা পাবেন সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন লিগাল এইড এজেন্সিগুলোতে কর্মরত সিভিল সার্ভেন্টস বা সরকারি চাকুরেরা। এই লিগ্যাল এইড এজেন্সিগুলো ব্রিটিশ বিচার মন্ত্রণালয়ের অংশ।

এর আগে জানিয়েছিল যে, অর্থ-সহায়তার জন্য শামীমা বেগমের আবেদন ইতোমধ্যেই মঞ্জুর করা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন সংবাদ-সূত্র জানিয়েছে যে, কয়েকদিনের মধ্যেই হয়তো তার আবেদনে চূড়ান্ত স্বাক্ষর হবে।

শামীমার জন্য যে অর্থ-সহায়তার আবেদন করা হয়েছে, সেটি পেলে এর আওতায় মামলার খরচ দেয়া হবে। মামলাটি চলবে স্পেশাল ইমিগ্রেশান এপিলস কমিশনে, যেটি আসলে আধা-গোপনীয় বা সেমি-সিক্রেট।

সাংবাদিক ডমিনিক কেসিয়ানি তার বিশ্লেষণ বলছিলেন যে, স্পেশাল ইমিগ্রেশন এপিলস কমিশনের মামলাগুলো অত্যন্ত জটিল প্রকৃতির হয়।

কারণ এই জাতীয় মামলাগুলোর ক্ষেত্রে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-ফাইভ এর অনেক গোয়েন্দা প্রতিবেদন-ও থাকে। কিন্তু সেগুলো বাদীর সামনে প্রকাশ করা যায় না।

শামীমার সাথে ২০১৫তে আরো যে দু'জন গিয়েছিল তারা হলো ১৬ বছর বয়সী খাদিজা সুলতানা এবং ১৫ বছর বয়সী আমিরা আবাসি। তারা তিনজনই বেথনাল গ্রিন একাডেমির ছাত্রী ছিলেন।

এ বছর ফেব্রুয়ারিতে শামীমাকে সিরিয়ার উদ্বাস্তু শিবিরে পাওয়া গেলে তিনি তার দেশ ব্রিটেনে ফিরে আসার আকুতি জানান। কিন্তু এর ক'দিনের মধ্যে তিনি একটি ছেলে-শিশু জন্ম দেন।

শিশুটি অবশ্য তিন সপ্তাহেরও কম বয়সেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এই ছেলেটি জন্মের আগে শামীমা আরো দুটো সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। তারাও মারা যায়।

শামীমার সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ সমালোচনার মুখে পড়েন। শামীমার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ায় মি. জারিফের সমালোচনায় পড়েন।

শামীমার নবজাতকের মৃত্যুর সপ্তাহ তিনেক আগে, তার বোন রেণু বেগম শিশুটিকে ব্রিটেনে ফিরিয়ে আনতে জাভেদ জারিফের কাছে সহায়তার অনুরোধ করেছিলেন।

জারিফ জানিয়েছেন লিগ্যাল এইড মঞ্জুর করা হওয়া না হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে অর্থ-সহায়তা দাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উপরে। তাই এটি কোনো মন্ত্রীর মন্তব্যের বিষয় নয়। তবে, শামীমার ঘটনাটি নিয়ে সরব লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন।

শামীমাকে নিয়ে তিনি বলেছেন, সে ব্রিটিশ নাগরিক। অতএব, লিগ্যাল-এইড পাবার অধিকার রয়েছে।

শামীমার পরিবারের একজন বন্ধু এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক প্রধান সুপারিন্টেনডেন্ট দাল বাবু বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করতে শামীমার লিগাল-এইড দরকার।

১৯৮১ সালে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়, জনকল্যাণের স্বার্থে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনও ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারেন। কিন্তু এর ফলে সেই ব্যক্তিকে রাষ্ট্রহীন নাগরিকে পরিণত করা যাবে না।

মনে করা হতো যে, মায়ের সূত্রে শামীমার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ বলেছে, ভুলভাবে শামীমাকে বাংলাদেশের নাগরিক ভাবা হয়েছে। কারণ শামীমা কখনো বাংলাদেশে আসেননি বা নাগরিকত্ব পেতে আবেদনও করেনি। আরটিএনএন

captcha