IQNA

প্রতিবেদন ফাঁস

সৌদি আরবে রাজবন্দিদের ওপর অকথ্য নির্যাতন

20:23 - April 01, 2019
সংবাদ: 2608243
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি আরবের ফাঁস হয়ে যাওয়া এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশটির রাজনৈতিক বন্দিরা কাটা, ছেঁড়া, পোড়া, চাবুকের আঘাতসহ নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতনের শিকার। পাশাপাশি রয়েছে তীব্র অপুষ্টি। প্রতিবেদনটি সৌদি বাদশাহ সালমানের জন্য তৈরি করা হয়। এই প্রথম সৌদি আরবের রাজকীয় আদালত থেকে রাজনৈতিক বন্দিদের ওপর অকথ্য শারীরিক নির্যাতনের কোনো লিখিত নথি ফাঁস হলো।

বার্তা সংস্থা ইকনা: প্রতিবেদনটি ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের হাতে আসে। এতে গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য কয়েকজন বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার অথবা মুক্তি ত্বরান্বিত করার পরামর্শও ছিল। বাদশাহর নির্দেশক্রমেই এই পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। একটি সৌদি সূত্র জানায়, বেশ কয়েকজন নারীসহ ৬০ জন বন্দির স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাদশাহ। এক সপ্তাহ আগে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে সৌদি কর্মকর্তার মত জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠছিল। কয়েকজন নারী বন্দির ওপর ইলেকট্রিক শক, চাবুকপেটা, এমনকি যৌন নির্যাতন করা হয়ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কয়েক মাস আগে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে নির্বাসিত সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার ঘটনা—সব মিলিয়ে তীব্র চাপের মুখে পড়ে যায় রিয়াদ। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যেই এই প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন বাদশাহ। তাঁর উত্তরসূরি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে গত দুই বছরে অন্তত ২০০ নারী-পুরুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বন্দিদের মধ্যে কয়েকজনের নামও জানা গেছে। তাঁরা হলেন আদেল আহমেদ বানিমাহ, মোহাম্মদ সৌদ আল বিশের, ফাহাদ আবদুলাজিজ আল-সুনাইদি, জুহাইর কুতবি, আবদুলাজিজ ফাওজান আল ফাওজান এবং ইয়াসিক আবদুল্লাহ আল-আইয়াফ। নারীদের মধ্যে রয়েছেন সামার মোহাম্মদ বাদাউয়ি, হাতুন আজওয়াদ আল-ফাসি ও আবির আবদুললাতিফ আল নামানকানি।

জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে বন্দিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পরামর্শসহ প্রতিবেদন তৈরি করা হয় তখনই। এই প্রতিবেদনে ব্যক্তি ধরে ধরে স্বাস্থ্য সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, তীব্র পুষ্টিহীনতা ও পানিশূন্যতা প্রায় সবার মধ্যেই লক্ষ করা গেছে। অনেকের ওজন কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। নিতম্ভ, ঊরু ও পায়ে চাবুক ও বেত্রাঘাতের দাগ রয়েছে। অনেকেই হাঁটতে পারেন না। প্রায় সবাইকেই নির্জন কারাগারে রাখার কথা বলা হয়েছে। পুরো শরীরে পোড়ার দাগ পাওয়া গেছে। পুরনো ক্ষতও কম নেই। কারণ চিকিৎসার কোনো সুযোগই রাখা হয়নি।

এ ব্যাপারে সৌদি আরবের কোনো কর্মকর্তা কোনো মন্তব্য করেননি। তবে ব্যক্তিগতভাবে ওয়াশিংটনের সৌদি দূতাবাসের মুখপাত্র বন্দি নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেন। বিষয়টি নিয়ে গার্ডিয়ান বন্দিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে মানবাধিকারকর্মীরা তাদের সতর্ক করেন। কারণ সে ক্ষেত্রে সৌদি আরবের ভেতরে থাকা পরিবারগুলোও সংকটে পড়ে যেতে পারে।

বেশির ভাগ বন্দির আটকের কারণ জানানো হয়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সব বন্দিকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানায়। সংগঠনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘বন্দিরা মাসের পর মাস ধরে ইলেকট্রিক শক, বেত্রাঘাতসহ যৌন হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।’

কমিটি অব প্রটেক্ট জার্নালিস্টের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক গবেষণা সহযোগী জাস্টিন শিলাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সৌদি আরবের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে দেশের ভেতরের নীরবতার কোনো তুলনা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমি লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরাক নিয়েও কাজ করেছি। সেখানেও ভীতির মাত্রা বা তথ্যের বিষয়ে এমন তীব্র নীরবতা নেই। এ ধরনের আনুগত্য একমাত্র ইসলামিক স্টেটের খিলাফতেই দেখা গেছে।’ দ্য গার্ডিয়ান/ কালের কণ্ঠ

captcha