এই দিনে জিয়াদ শাবাশ বিন রবি নামের এক ব্যক্তিকে এক হাজার সেনাসহ কারবালায় পাঠায়।এ ছাড়াও সে জাহর বিন কাইস নামের এক ব্যক্তিকে ৫০০ সেনাসহ কারবালা ময়দানের কাছে 'সা'দা' নামের সেতুতে এ দায়িত্বে নিয়োজিত করে যে কেউ যদি ইমাম হুসাইন (আ.)’র পক্ষে যুদ্ধ করতে কারবালায় প্রবেশ করে তাকে সে হত্যা করবে। কিন্তু এত প্রহরা সত্ত্বেও ৫ ই মহররম আমের বিন আবি সালামাহ নামের একজন ইমাম-প্রেমিক কাইসের বাহিনীর ওপর একাই বীরত্বপূর্ণ ঝটিকা হামলা চালিয়ে সবার সামনে সরাসরি ইমাম-শিবিরে যোগ দেন এবং আশুরার দিনে শাহাদত বরণ করেন।
এর আগে জিয়াদ বিপুল সংখ্যক সেনা সমাবেশের চিন্তা করতে থাকে। কুফাসহ আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে লোক পাঠিয়ে সেনা সংগ্রহের কাজ চলতে থাকে এবং ইমামের প্রতি সহযোগিতার কঠোর পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। এ সময় আমের বিন আবি সালামাহ নামক ইমামের (আ) এক সমর্থক ইবনে জিয়াদের এক সেনা-নিবাস বা সেনা-উদ্যানে জিয়াদকে হত্যার চেষ্টা চালান। কিন্তু সফল হননি। ইনি পরে কারবালায় ইমাম (আ.)’র পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য জাহেলি যুগেও আরব মুশরিক ও কাফিররা মহররম মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ করত না। কিন্তু উমাইয়া শাসনামলে মুসলমান নামধারী শাসকরা এতটাই হীন ও নীচ হয়ে পড়েছিল যে তারা রাসূলের(সা.) নাতি ও তাঁর পরিবারকে নৃশংসভাবে শহীদ করতে কুণ্ঠিত হয়নি।
৬১ হিজরির চতুর্থ মহররম কুফায় নিযুক্ত ইয়াজিদের নরপিশাচ গভর্নর ইবনে জিয়াদ ‘শুরাইহ কাজি’ নামক দরবারি আলেমের ফতোয়ার ভিত্তিতে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যার জন্য জনগণকে উস্কানি দিয়েছিল। শুরাইহ কাজিকে বিপুল অংকের অর্থ ঘুষ দেয়া হয়েছিল।
কুফাবাসী ইমাম হুসাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য কারবালায় সেনা না পাঠালে তাদেরকে হত্যা করা হবে বলেও ইবনে জিয়াদ হুমকি দেয়। শুরাইহ কাজির একই ফতোয়া কুফাবাসীর ওপরও প্রয়োগ করা হয়।
কুফার মসজিদে ‘শুরাইহ কাজি’র ফতোয়া শুনিয়ে ইবনে জিয়াদ একদল মানুষকে ইমামের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে। ইবনে জিয়াদের নির্দেশে তৈরি করা ওই ফতোয়ায় বলা হয়েছিল হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের খলিফা ইয়াজিদের আনুগত্য করেননি তাই তাকে দমন করা মুসলমানদের জন্য ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।
কুফার লোকেরা যদি ইমাম হুসাইন (আ)কে ইয়াজিদের প্রতি আনুগত হতে বাধ্য করতে পারে বা ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্য না করার কারণে তাকে হত্যা করে তাহলে কুফাবাসীদের পুরস্কার দেয়া হবে বলেও ইবনে জিয়াদ ঘোষণা করে।
কুফার ১৩ হাজার বিভ্রান্ত মুসলমান ইমাম হুসাইন (আ.)’র বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ওমর সাদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। এদের মধ্যে শিমার বিন জিল জুশান ছিল ওই ১৩ হাজার সেনার চার জন কমান্ডারের অন্যতম।
ইমাম হুসাইন (আ) তাঁর পরিবার-পরিজন ও একদল সঙ্গীসহ কুফায় আসার পথে পয়লা বা দোসরা মহররম ইয়াজিদের অনুগত বাহিনীর বাধার মুখে কারবালায় শিবির স্থাপন করেন। কুলাঙ্গার ইয়াজিদকে খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ও তার প্রতি আনুগত্যের শপথ করতে উমাইয়া শাসনযন্ত্রের পক্ষ হতে মহান ইমাম হুসাইনের প্রতি চাপ বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে তিনি জন্মভূমি মদীনা ত্যাগ করে মক্কায় চলে যান। মক্কায়ও নিরাপত্তা না থাকায় ও কুফার বিপুল সংখ্যক জনগণের পক্ষ থেকে ইয়াজিদ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য আহ্বানের প্রেক্ষাপটে পবিত্র হজের প্রাক্কালে তিনি মক্কা ত্যাগ করে কুফার দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন।
কুফার জনগণের মনোভাব বোঝার জন্য প্রথমে ইমাম সেখানে তার চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকে পাঠান। প্রথমদিকে কুফার জনগণ আকিলকে বিপুল সমর্থন ও সম্বর্ধনা জানালেও ইয়াজিদের গভর্নর ইবনে জিয়াদের ধর-পাকড় ও সন্ত্রাসের মুখে আকিলকে একাকি পরিত্যাগ করে তারা। আকিল বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে নির্মমভাবে শহীদ হন। এ খবর জানার পরও ইমাম হুসাইন (আ) ইসলামকে রক্ষা করতে তাঁর বিপ্লবী অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন এবং ভীত-সন্ত্রস্ত ও অসচেতন জনগণকে সচেতন করতে শাহাদাতের পথ বেছে নেন।
সূত্র: পার্সটুডে