IQNA

নওমুসলিমের কথা;

ইসলাম গ্রহণের আগে নিজেকে অন্তঃসারশূন্য মনে হতো

15:20 - July 15, 2021
সংবাদ: 3470320
তেহরান (ইকনা): কানাডিয়ান নওমুসলিম সুমাইয়া এভলিন টনিলিয়ারের জন্ম একটি নাস্তিক পরিবারে। কিন্তু শৈশব থেকেই তাঁর অন্তরে ছিল ধর্মের প্রতি কৌতূহল। সেই কৌতূহল মেটাতে গিয়ে এক মুসলিম সহকর্মীর দ্বারস্থ হন এবং ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারেন।

তাঁর মনে হয়, ইসলামই নারীকে প্রকৃত স্বাধীনতা দান করেছে। কোনো এক রমজানের আগে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ভাষায় তাঁর ইসলাম গ্রহণের বিবরণ তুলে ধরা হলো

অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেন, কেন কানাডায় জন্ম নেওয়া একজন খ্রিস্টান নারী এমন ধর্ম গ্রহণ করলেন, যা শুধু নারী স্বার্থের বিরোধী নয়; বরং যে ধর্ম নারীর সব স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে এবং নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করেছে—তার স্পষ্ট সমর্থন। আমি তাদের প্রশ্নগুলো প্রত্যাখ্যান করি এবং পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিই : কেন কথাকথিত সভ্য সমাজে জন্ম নেওয়া বহু নারী—যারা কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মতো দেশে বেড়ে উঠেছে, তারা কেন স্বেচ্ছায় তাদের স্বাধীনতা, মুক্ত জীবন ত্যাগ করে এমন ধর্ম গ্রহণ করছে, যা তাদের নির্যাতন করে এবং তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে? একজন কানাডিয়ান নওমুসলিম হিসেবে আমি শুধু আমার ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করতে পারি। আমি এমন একটি ধর্ম গ্রহণ করেছি, যা নারীদের অনন্য মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে তাদের প্রকৃত স্বাধীনতা প্রদান করেছে।

একটি নাস্তিক পরিবারে বেড়ে উঠেছি আমি। আমি যখনই তাদের জিজ্ঞাসা করেছি—পৃথিবীতে কোনো স্রষ্টা আছে? তিনি কে? তিনি কোথা থেকে এসেছিলেন? তারা আমাকে বলতেন, তোমার যা ইচ্ছা তুমি বিশ্বাস করতে পারো। তাদের জবাব আমাকে দ্বিধান্বিত করত। কেননা আমার বহু বন্ধুর ধর্ম আছে। আমার কেন থাকবে না? আমার মনে আছে, যখন আমার বয়স ছয় বা সাত বছর, আমি এক বন্ধুর সঙ্গে রবিবার চার্চে গিয়েছিলাম। কিন্তু আরো বহু কানাডিয়ান শিশুর মতো আমি স্বস্তিবোধ করিনি। হয়তো যিশুখ্রিস্ট সম্পর্কে আমার পূর্বধারণা না থাকায় প্রার্থনা পরিচালকের নির্দেশনা আমার কাছে চাপ মনে হচ্ছিল। ফলে আমি রবিবার চার্চে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম এবং ধর্মহীন অবস্থায় বেড়ে উঠলাম।

হাই স্কুলে ওঠার পর আমি ‘সোশ্যাল স্টাডিজ’ ক্লাসে ধর্ম বিষয়ে জানার সুযোগ পাই। আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, আমাদের শ্রেণি শিক্ষক ‘ইসলামে নারীর অধিকার’ বিষয়টি কিভাবে তুলে ধরেছিলেন। তিনি আমাদের বলেছিলেন, ইসলামে নারীর কোনো অধিকার নেই, মুসলিমরা নারী শিক্ষার অধিকার অস্বীকার করে, নারীর প্রতি বৈষম্য করে এবং বলে, নারী অবশ্যই পুরুষের আনুগত্য করবে এবং পুরুষ তাকে প্রহার করার অধিকার রাখে। বিষয়গুলো আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। আমাদের শিক্ষক কী বলেছিলেন সেটা বড় বিষয় নয়; কিন্তু তার উপস্থাপন ভঙ্গিই বলে দিচ্ছিল অভিযোগগুলো সত্য হতে পারে না। ঘটনাক্রমে একই সময়ে আমার কর্মস্থলে খালিদ নামে একজন মুসলিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। আমি তাকে শিক্ষকের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাই। সব শুনে সে আহত বোধ করে এবং আমার সামনে সঠিক অবস্থান তুলে ধরে। আমি যখন শিক্ষক খালিদের বক্তব্য তুলে ধরলাম, তিনি ক্ষিপ্ত হলেন এবং বললেন, আমার তথ্যের উৎস গ্রহণযোগ্য নয়। পাঠ্যপুস্তকের আলোকেই তিনি আমাদের পাঠদান করেন।

মুসলিমসমাজে নারীর ভূমিকা নিয়ে আমি খুবই কৌতূহলী ছিলাম। তাই খালিদের সঙ্গে মুসলিম নারীদের নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখলাম। সে যা বলত, আমি তা-ই গ্রহণ করতাম বিষয়টি এমন নয়। তখনো আমি ভাবতে পারতাম না, একসময় আমি এমন নারীদের একজন হবো যারা পুরো শরীর ঢেকে রাখে।

আমি যখন অন্য ধর্ম বিষয়ে পাঠ করছিলাম। আমি হতাশা, আলস্য ও আধ্যাত্মিকভাবে অন্তঃসারশূন্য অনুভব করছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমার জীবনের বড় একটি অংশ এখনো আমার দৃষ্টি সীমার বাইরে। এরপর যখন আমি কোরআন পাঠ শুরু করি, তখন জীবনের প্রকৃত অর্থ আমার বুঝে আসে। কোরআন আমার মনে জমে থাকা সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছে এবং কোরআনে আমি এমন সব বিষয়ের সমাধান পেয়ে বিস্মিত হয়েছি, যা আমি আগে কখনো ভাবিনি। রমজানের এক সপ্তাহ আগে আমি ইসলাম গ্রহণ করি এবং নামাজ আদায়ের জন্য দুটি সুরা মুখস্থ করি।
ইসলামিক ওয়েব থেকে আবরার আবদুল্লাহর ভাষান্তর

captcha