বার্তা সংস্থা ইকনা’র রিপোর্ট: মিশরের এই বিখ্যাত ক্বারির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সেদেশের কর্তৃপক্ষে আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ সাওতুল মক্কা ওয়া মাযমারুল কুরআন” (আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ মক্কার সুললিত কণ্ঠ এবং কুরআনের বাঁশী) শীর্ষক এক নোটে উল্লেখ করেছে: আব্দুল বাসিতের ডাকনাম কুরআনের দূত ছিল। তিনি দীর্ঘ দিন তার সুললিত কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করে শ্রোতাদের হৃদয়ে বিশেষ জায়গা স্থাপন করে নিয়েছেন। তার মনোরম তিলাওয়াত শ্রোতাদের নিকট এখনও আকর্ষণীয় হয়ে আছে।
মিশরের ক্বানা প্রদেশের অরমান্ত শহরের অদূরে “আল-মাযা ইজ্জা” গ্রামে ১৯২৭ সালে আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ জন্মগ্রহণ করেন। ১৪ বছর পূর্ণ না হতেই তিনি সপ্তম ও দশম পন্থায় কুরআন তিলাওয়াত শিখেছেন। তার কণ্ঠে এতটা আকর্ষণ ছিল যে যথাযথভাবে তার কণ্ঠকে স্বর্গীয় কণ্ঠ হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে।
কুরআনিক পরিবার
আব্দুল বাসিতের দাদা “আব্দুস সামাদ” একজন কুরআনের হাফেজ এবং ধর্মানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন এবং তার নানা “জালীল আবু দাউদ” অরমান্ত শহরের প্রসিদ্ধ শিক্ষক ছিলেন। তার পিতা শাইখ মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ কুরআনের তাজবিদ ও হেফজের শিক্ষক ছিলেন। এই পরিবেশে তিনি কুরআন তিলাওয়াতের সমস্ত গুণাবলী অর্জন করে কুরআনের ক্বারিদের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেন এবং ১৯৫১ সালে তিনি ক্বারি হিসেবে মিশরের রেডিওতে যোগদান করেন।
১৯৫২ সালে আব্দুল বাসিত আব্দুস সামাদ সৌদি আরবে ভ্রমণ করেন এবং সেখানে তার সুললিত কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত রেকর্ড করা হয়। মনোরম কণ্ঠস্বরের কারণের তিনি “ভয়েস অফ মক্কা” নামে খ্যাতি অর্জন করেন।
বিশ্ববিখ্যাত এই ক্বারি তার স্মৃতিচারণ থেকে বলেন: “১০ বছর বয়সে আমি সম্পূর্ণ কুরআন হেফজ করি এবং আমার পিতা ও দাদার নিকটে কুরআন তিলাওয়াত শেখানোর জন্য আহ্বান জানায়”। তারা আমাকে বলেছেন, কুরআন তিলাওয়াত শেখার জন্য তোমাকে তানতা শহরে যেতে হবে এবং সেখানে কুরআনের শিক্ষক “মুহাম্মাদ সালিম”-এর নিকটে কুরআন শিক্ষা অর্জন করবে। তানতা শহরে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একদিন পূর্বে জানতে পারি যে, কুরআনের শিক্ষক মুহাম্মাদ সালিম শিক্ষার্থীদের কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য অরমান্ত শহরে এসেছেন। এভাবে আমি তার নিকটে যায় এবং কুরআন তিলাওয়াত তার নিকট হতে শিখি। অতঃপর আমি “আল-শাতিবিয়া” (তাজবিদ শিক্ষার বই) মুখস্থ করি।
গৌরবময় কল্পকাহিনী
মরহুম আব্দুল বাসিত ১৯৫০ সালে কায়রোয় যান এবং ১৯৫১ সালে মিশরের রেডিওতে যোগদান করেন। মিশরের রেডিওতে সর্বপ্রথম তিনি সূরা ফাতিরা তিলাওয়াত করেন। তিনি ১৯৫২ সালে “ইমাম শাফেয়ী” মসজিদের ক্বারি এবং ১৯৮৫ সালে “ইমাম হুসাইন (আ.)” মসজিদে “শাইখ মুহাম্মাদ আলী আল-বানা” স্থানে ক্বারি হিসেবে নিয়োজিত হন। আব্দুল বাসিত তার সুর এবং কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় ছিলেন। তিনি অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কুরআন তিলাওয়াত আসনে বসেছেন এবং এটিকে একটি গৌরবময় কল্পকাহিনী হিসাবে পরিণত করেছেন।
পবিত্র নগরী মক্কা’র মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদুন নববী, জেরুজালেমের মসজিদুল আকসা, ফিলিস্তিনের আল-খালিল শহরের ইব্রাহিমী মসজিদ, দামেস্কের উমাভি মসজিদসহ এশিয়া, আফ্রিকা, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড এবং ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কুরআন তিলাওয়াত করেছেন।
অর্জন
১৯৫৬ সালে সিরিয়ায় আব্দুল বাসিতকে মেধার সম্মান দিয়ে সম্মানিত করা হয়। এছাড়াও লেবাননে তাকে ব্রোঞ্জপদক এবং মালয়েশিয়ায় স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। আব্দুল বাসিত আব্দুল সামাদ তার জীবদ্দশায় ইসলামী ও অ-ইসলামী দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অনেক পুরষ্কারও পেয়েছেন। সিঙ্গাপুর এবং মরক্কোও এই প্রসিদ্ধ ক্বারিকে সম্মাননা প্রদর্শন করেছে।
আব্দুল বাসিত পুষ্টির নীতিমালা মেনে ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে তিনি এই দুই রোগের বিরুদ্ধে বেশী দিন প্রতিরোধ করে থাকতে পারেন নি। দীর্ঘদিন কুরআনের সেবা করার পর তিনি অবশেষে ১৯৮৮ সালের ৩০শে নভেম্বর বুধবার ইন্তেকাল করেন। বিশ্বখ্যাত এই ক্বারির জানাজার নামাজে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেছেন। iqna